ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ; অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা। ১৯৬৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক (সম্মান) এবং ১৯৬৯ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ১৯৭৮ সালে কানাডার হ্যামিল্টনে অবস্থিত ম্যাকমাস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সামষ্টিক অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৭০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতির প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমির (বার্ড) মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৫ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ছিলেন। গভর্নরের পদ থেকে অবসরের পর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছেন। আগামী অর্থবছরের বাজেটের বিভিন্ন দিক নিয়ে তিনি একটি জাতীয় দৈনিকে স্বাক্ষাতকার দিয়েছেন
: আজ বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন। এখন অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনা করছে। কীভাবে বাজেট উপস্থাপন করবেন?
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ: প্রথমত, আপনি যে প্রশ্নটা করেছেন, এটা কিন্তু নতুন কিছু নয়। এর আগেও এমন হয়েছে। সংসদ না থাকলেও বাজেট দেওয়া হয়েছে। এবারও আমরা ২ জুন (আজ) বাজেট ঘোষণা করব। বাজেট উপস্থাপন টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হবে, সেটা বিটিভিতে প্রচার হবে।
বাজেট উপস্থাপনের নিয়ম অনুযায়ী—যেহেতু এটি সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব সেহেতু সেটা সংসদে দেওয়া হয়। কিন্তু এখন যেহেতু সংসদ নেই, তাই আমরা একটি সংক্ষিপ্ত বাজেট বক্তব্য দেব। এর আগে যেমন হয়েছে, এবারও তেমনই হবে। পুরো বাজেট ডকুমেন্ট প্রিন্ট এবং অনলাইনে দেওয়া হবে।
এবারের বাজেট বক্তৃতা অনেক সংক্ষিপ্ত হবে—প্রায় ১৩০-১৪০ পৃষ্ঠার মধ্যে থাকবে। বক্তৃতা সংক্ষিপ্ত হলেও পুরো ডকুমেন্টেই সব বিস্তারিত থাকবে। বাজেট উপস্থাপনের পর আমরা দুই থেকে তিন সপ্তাহ সময় দেব, আলোচনার জন্য।
৩০ জুন রাষ্ট্রপতি বাজেট অধ্যাদেশে সই করবেন। সেটাই হবে অফিসিয়াল বাজেট অনুমোদন। তবে বাজেটের অনেক অংশ, বিশেষ করে ট্যাক্স ও কাস্টমস-সংক্রান্ত বিষয়গুলো আজ থেকে কার্যকর হবে। অন্য বরাদ্দগুলো আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে।
আমরা বাজেট প্রণয়নের আগে বিস্তর আলোচনা করেছি—অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী অ্যাসোসিয়েশন, সাংবাদিক, ব্যাংকার, এমনকি শেয়ারবাজারের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গেও। এনবিআর চেয়ারম্যান প্রতিদিন বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন যে, এবার আলোচনা হয়নি, এটা ঠিক নয়। বাজেট নিয়ে গতবারের চেয়ে বেশি পরামর্শ সভা হয়েছে।
আমরা চেষ্টা করেছি বাজেটে যতটা সম্ভব বাস্তবতা আনতে, কারও প্রশংসা বা বিরুদ্ধাচরণ না করে নিরপেক্ষভাবে প্রস্তাব করতে। বাজেট এমন কিছু নয় যে একেবারে মৌলিক পরিবর্তন এনে এক বছরে বাস্তবায়ন করে ফেলব। ধাপে ধাপে পরিবর্তন করতে হবে। এবারে বাজেট বাস্তবতার ভিত্তিতে, যতটা সম্ভব যুক্তিযুক্ত ও সরল রাখার চেষ্টা করেছি।
: বাজেটে সাধারণ মানুষের স্বস্তির খবর কী রয়েছে?
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ: ‘সুসংবাদ’ আছে বা ‘দুঃসংবাদ’ আছে—এভাবে বলা ঠিক হবে না। এটা যার যার দৃষ্টিভঙ্গির ওপর নির্ভর করে। আমরা মূলত ব্যবসাবান্ধব বাজেটের দিকে এগোনোর চেষ্টা করেছি। তবে সবাই সমানভাবে উপকৃত হবেন, তা নয়। যেসব খাত এতদিন কম সুবিধা পেয়েছে বা যাদের জন্য সুযোগ কম ছিল, তাদের প্রতি আলাদাভাবে নজর দেওয়া হয়েছে। ভোক্তা বা সাধারণ মানুষের জন্য, বিশেষ করে যাদের আয় সীমিত, তাদের জন্য কিছুটা স্বস্তির ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। আমরা অনেক আগে থেকেই চেষ্টা করে আসছি যে, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ করের ভার যেন সহনীয় থাকে। এবারের বাজেটেও সে লক্ষ্যেই কাজ করা হয়েছে।
ভ্যাট কাঠামো সহজ করার দিকে নজর দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে আমরা ইউনিফর্ম ভ্যাটের দিকে এগোচ্ছি। ভ্যাটের বিভিন্ন স্তর যেমন ১%, ১.৫%, ২.৫%, ৩% ইত্যাদি অনেক সময় বাস্তবায়ন ও হিসাব-নিকাশে জটিলতা তৈরি করে। এবার সেসব স্তর কমিয়ে নির্দিষ্ট হারে নিয়ে আসার চেষ্টা করা হবে, যাতে এটা বাস্তবায়নযোগ্য ও সহজ হয়। আয়করের ক্ষেত্রে ব্যক্তি আয়করদাতাদের কিছুটা স্বস্তি দেওয়ার চেষ্টা থাকবে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্তবিহীন কোম্পানির কর হারে পার্থক্য বাড়ানো হবে, যাতে আরও প্রতিষ্ঠান শেয়ারবাজারে আসতে উৎসাহিত হয়। শেয়ারবাজারে ব্রোকারদের ওপর আরোপিত কর কিছুটা কমানো হবে। যারা ছোট প্রতিষ্ঠান মার্চেন্ট ব্যাংক থেকে ঋণ নেয় এবং যাদের ইক্যুইটি নেতিবাচক হয়ে পড়ে, তাদের ওপর ট্যাক্সের চাপ কিছুটা কমানো হবে।
যাদের কর দেওয়ার সক্ষমতা কম, যেমন নিম্ন আয়ের ভোক্তা, তাদের পণ্যে কিছুটা ছাড় বা সহায়তা দিতে চেষ্টা করেছি। অন্যদিকে যাদের কর দেওয়ার ক্ষমতা আছে, তাদের জন্য করছাড় সীমিত থাকবে। পাশাপাশি ব্যবসা সহজ করার জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যেমন, আগে ট্রেড লাইসেন্স দুই বছর পর রিনিউ করার জন্য আবেদন করতে হতো এবং অডিট রিপোর্ট জমা না দিলে, তা দেওয়া হতো না। এবার থেকে দুই বছর পূর্ণ হওয়ার আগে যদি কেউ আবেদন করেন, তবে অডিট রিপোর্ট ছাড়াই প্রাথমিকভাবে লাইসেন্স নবায়ন হয়ে যাবে এবং পরে অডিট রিপোর্ট জমা দেওয়া যাবে। বর্তমানে প্রতি মাসে ভ্যাট রিটার্ন জমা দিতে হয়—এটা ব্যবসায়ীদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ছে। আমরা তিন বা ছয় মাস অন্তর রিটার্ন দেওয়ার সুযোগ রাখার কথা ভাবছি। ওয়েভারগুলো ধীরে ধীরে তুলে নেওয়া হচ্ছে। শুধু প্রয়োজনীয় জায়গাগুলোতেই নির্দিষ্ট ও যৌক্তিক করছাড় থাকবে। পুরো বাজেট পরিকল্পনাই হচ্ছে বাস্তবমুখী, ব্যবসাবান্ধব এবং ট্যাক্স ব্যবস্থা সহজ করার ভিত্তিতে।
: এবার করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়বে কি?
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ: হ্যাঁ, একটু বাড়াতে হবে, কিন্তু খুব বেশি বাড়ানো যাবে না। এ বছরে প্রায় ১৮ লাখ রিটার্ন জমা পড়েছে তার মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ জিরো ট্যাক্স দিয়েছেন। সাড়ে ৩ লাখ টাকার ওপরে আয় হলে করযোগ্য; কিন্তু বাস্তবে বেশিরভাগই জিরো ট্যাক্স দেখাচ্ছে।
সমস্যা রাজস্ব আহরণ ব্যবস্থায়। যারা কর দেওয়ার কথা, তাদের অনেকেই দেয় না—বেঁচে যায় না দিয়ে। যার মাসিক আয় ৩০-৪০ হাজার টাকা, সেও জিরো ট্যাক্স দেখাচ্ছে। সুতরাং, হুট করে সব বন্ধ করা যাবে না। তবে করমুক্ত আয়ের সীমা কিছুটা বাড়ানো হবে এবার এবং যারা ইচ্ছাকৃতভাবে কর ফাঁকি দেয়, তাদের জন্য ‘মিনিমাম ট্যাক্স’ চালু করব। অর্থাৎ, রিটার্ন জমা দিলে একটা মিনিমাম ট্যাক্স অবশ্যই দিতে হবে—আমরা এ সিদ্ধান্তে এসেছি।
: এবারও বাজেটে ঘাটতি থাকবে। আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্য করবেন কীভাবে?
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ: প্রথমত, আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ আর এজন্য প্রথমেই আমরা ‘ট্যাক্স এক্সপেন্ডিচার’ কমানোর উদ্যোগ নিচ্ছি। ‘ট্যাক্স এক্সপেন্ডিচার কমানো’ বলতে বোঝায় বিভিন্ন এক্সেম্পশন বা ছাড় সীমিত করা। এতে আদায়যোগ্য রাজস্ব বাড়বে।
আরেকটা বড় বিষয় হলো—লিকেজ কমানো। আমরা আগামী বছর থেকে পারসোনাল ইনকাম ট্যাক্স পুরোপুরি ডিজিটাইজ করব। এতে কেউ চ্যালেঞ্জ করে কোনো ঘুষ বা অনিয়ম করে সার্কেলকে ম্যানিপুলেট করতে পারবে না। ব্যবসায়ীদের করপোরেট ট্যাক্স রেট কমাতে চাই, যাতে মোট ট্যাক্স আদায় বাড়ে। এখন কিছু ট্রেজারি বিল দিয়ে সরকার টাকা নিচ্ছে—এটা ঠিক আছে, তবে আমরা এর ওপর খুব বেশি নির্ভরশীল হতে চাই না। আমরা মনে করি পলিসি রেট (নীতি সুদহার) এখন তুলনামূলক উঁচু আছে, একেবারে নামিয়ে দিতে পারব না। কারণ এতে মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যেতে পারে। আমরা চাই ব্যবসা-বাণিজ্যকে একটু উৎসাহিত করতে, কারণ মূল রাজস্ব কিন্তু পারসোনাল ইনকামের চেয়ে করপোরেট ইনকাম থেকেই আসে।
যদি চাকরি না থাকে, ব্যবসা না চলে, তাহলে আয়করও আসবে না। আমরা চাই যেন ব্যবসা ঠিকমতো চলে এবং রাজস্ব আহরণে কোনো লিকেজ না থাকে। অনেক খুচরা ব্যবসায়ী ভ্যাট আদায় করেন; কিন্তু সরকারি কোষাগারে জমা দেন না, সেটি বন্ধ করা হবে।
: শেয়ারবাজারের জন্য বাজেটে কী থাকছে?
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ: শেয়ারবাজারে অনেক সমস্যা। ১৫ বছর ধরে একই অবস্থা। ফ্লোর প্রাইস দিয়ে জেড ক্যাটাগরির শেয়ারকে রক্ষা করা হয়েছে আগে। আইসিবি থেকে ৩ হাজার কোটি টাকা নিয়ে কিছু শেয়ার বাঁচানোর চেষ্টা হয়। এগুলো ঠিক নয়। অনেকে ইনসাইডার ট্রেডিং করে দাম বাড়ায়, তারপর শেয়ার বিক্রি করে চলে যায়। শেয়ার মার্কেটকে নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। অনেক কোম্পানির অস্তিত্ব নেই, অথচ শেয়ারের দাম বাড়ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০০৭-০৮ সালে শেয়ারবাজারে বিলিয়ন ডলার ইনজেক্ট করেছিল। এখন আমরা চাচ্ছি নতুন কিছু IPO (Initial Public Offering) আনা হোক—স্টেট এন্টারপ্রাইজ, পিজিসহ কিছু বড় কোম্পানির শেয়ার ছাড়ার কথা ভাবছি। অনেক কোম্পানি আত্মীয়স্বজন দিয়ে পরিচালিত হয়, শেয়ার ছাড়তে চায় না।
আমরা চাই স্টার্টআপ ক্যাপিটাল বা ইনটেলেকচুয়াল ডেবট বাড়ুক। স্মার্ট কেউ যদি ঋণ চায়, তাকে লোন দেওয়া দরকার। অন্যদিকে যার টাকা আছে, সে ইক্যুইটি রেইজ করুক। এখন সবাই ব্যাংকের দিকে যায়, যা ঠিক নয়। এটা মানে ব্যাংকের টাকা নিয়ে বেরিয়ে যাওয়া।
: বাজেটে প্রতিবারই কালো টাকার বিষয়টি সামনে আসে। এবার এ বিষয় নিয়ে কী বার্তা থাকছে?
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ: কালো টাকার বিষয়ে ঢালাও যে সুযোগ ছিল, সেটা এমনি এমনি চলতে দেওয়া হবে না। আমরা একটা বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছি। অনেকের জমি বিক্রি করে অপ্রদর্শিত অর্থ তৈরি হয়েছে। যেমন ধরুন—গুলশানের এক কাটা জমির সরকারি দাম ১৫ লাখ, অথচ বাস্তবে সেটা ১ কোটি বা ৫০ লাখেও বিক্রি হয়। কেউ যদি একটা বাড়ি কেনেন ৬০ লাখে, আসলে তিনি ৩ থেকে ৪ কোটি টাকায় কেনেন।
এখন সমস্যা হয় যে, বিক্রি করছেন তার জন্যও আর যে কিনছেন তার জন্যও। কারণ, দুপক্ষই প্রকৃত লেনদেন দেখাতে পারেন না। এখন অনেকে এ কারণে জমি কিনে ফেলে রাখেন, রেজিস্ট্রেশন করেন না—কারণ ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা খরচ করবেন কেন? আমরা চেষ্টা করছি একটা সমাধান খুঁজে বের করতে। যদি ট্যাক্স রেট কমিয়ে দিই আর জমির ভ্যালুয়েশন বাড়িয়ে দিই, তাহলে নেট ট্যাক্স ইনকাম ঠিক থাকবে। তখন প্রকৃত লেনদেনকারী মানুষগুলো রেজিস্ট্রেশন করতে আগ্রহী হবেন। এখন অনেক সময় ব্যাংকে টাকা দেখাতে পারেন না, কোর্ট পর্যন্ত যেতে হয়। এখন তো অনেকে কোর্টে দৌড়ঝাঁপ করছেন—ধরা পড়ছেন, জবাব দিতে পারছেন না।
আমি এখন একটি কমিটি গঠন করেছি ল্যান্ড সেক্রেটারি ও ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড ও ডিফেন্স সেক্রেটারিকে নিয়ে। তারা ল্যান্ড ভ্যালুয়েশন রিভিউ করবে। বাংলাদেশে দুই বছর পরপর জমির ভ্যালুয়েশন হওয়ার কথা; কিন্তু তা হয় না।
গঞ্জের এক জায়গার আসল দাম ২ লাখ টাকা, কিন্তু রেজিস্ট্রি হচ্ছে ২০ হাজার টাকায়। এ কারণে আমরা ল্যান্ড সেক্রেটারিকে বলেছি কীভাবে ভ্যালুয়েশন করা যায়, সে বিষয়ে রিপোর্ট দিতে। তখন হয়তো রেজিস্ট্রেশন ফি কমানো হবে, কিন্তু লোকাল গভর্নমেন্ট ফি (যেমন পৌরসভার ফি) হয়তো কমানো যাবে না। এ বাজেটেই হয়তো আমরা পুরোটা পারব না, তবে ভবিষ্যতের জন্য এটি খুব জরুরি। না করলে সারা দেশে এক ধরনের অস্বচ্ছতা থেকে যাবে। ল্যান্ড রেভিনিউ বাড়বে না, বরং কমে যাবে।
: ব্যাংক খাত নিয়ে বাজেটে কী থাকছে এবার?
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ: ব্যাংকের বিষয়ে একটা রেজল্যুশন পদ্ধতি করা হয়েছে। যারা অল্প অঙ্কের ডিপোজিট রেখেছে, তাদের টাকাটা কীভাবে ফেরত দেওয়া হবে, তা ঠিক করা হয়েছে। আর যারা বড় অঙ্ক রেখেছে, তাদের বন্ড বা শেয়ার আকারে ফেরত দেওয়ার পদ্ধতি তৈরি করা হচ্ছে। ছয়টি ব্যাংকের অ্যাসেট কোয়ালিটি অডিট হয়েছে। এখন এ ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হবে কত টাকা লাগবে পুনর্গঠনের জন্য। তাদের ভাষায়, ‘স্যালভেজ’ করতে হবে মানে যাদের ক্ষতি হয়েছে, তাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। আমরা টাকা দিলাম এ ব্যাংকগুলোর জন্য। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক কিছুটা ভালো করেছে, এসআইবিএলও কিছুটা এগিয়েছে। ফার্স্ট সিকিউরিটি এখনো সমস্যায় আছে। এক্সিম ব্যাংকও ভালো করতে পারছে না। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক নিয়ে কাজ করছি।
মানি লন্ডারিংয়ের ব্যাপারেও কাজ হচ্ছে—১২টা কেস এরই মধ্যে শনাক্ত হয়েছে, আরও কয়েকটা আইডেন্টিফাই হয়েছে কিন্তু সময় লাগবে। অনেকে বলেন, সংস্কার করতে হলে আগে নির্বাচন শেষ হোক। আমরা বলছি, নির্বাচন ছাড়াও সংস্কার করা দরকার এবং সেটা আমরা শুরু করেছি। এটা চলমান প্রক্রিয়া, হুট করে শেষ হবে না। রাজনৈতিক সংস্কার ছাড়া নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে না—এটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। অনেকে বলছেন দেন, এখনই দিয়ে দেন, দুই মাস পর দিয়ে দেন। কিন্তু এটা আলোচনা করে, একটা সময় ঠিক করে এগোনো উচিত। যদি ফেয়ার নির্বাচন না হয়, তাহলে দেশ আবার নব্বইয়ের দশকের অবস্থায় ফিরে যাবে। যদি অ্যাকাউন্টেবিলিটি আর ট্রান্সপারেন্সি নিশ্চিত না হয়, তাহলে উন্নয়ন হবে না বরং সময়ই নষ্ট হবে।
খুলনা গেজেট/এইচ